এশার নামাজ কয় রাকাত

ফরয নামাযসমূহ

উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথা— [১] ফরয [২] যোহর [৩] আসর [৪] মাগরিব [৫] এশা আদায় করা ফরযে আইন। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মোট ১৭ রাকআত ফরয নামায রয়েছে। যথা—
[ক] ফজরে ২ রাকআত।
[খ] যোহরে ৪ রাকআত।
[গ] আসরে ৪ রাকআত।
[ঘ] মাগরিবে ৩ রাকআত।
[ঙ] এশায় ৪ রাকআত।
এছাড়া জুমআর নামায এবং জানাযার নামাযও আমাদের উপর ফরয। তবে জানাযার নামায ফরযে আইন নয়, বরং ফরযে কেফায়া। অর্থাৎ, এলাকার কয়েকজন লোক জানাযা পড়লে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। আর কেউ আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে।

এশার নামাজ কয় রাকাত

ফরয নামায পড়ার নিয়ম

ফরয নামায যদি ২ রাকআত বিশিষ্ট হয় [যেমন— ফজরে দুই রাকআত ফরয] তাহলে উভয় রাকআতে সূরা ফাতিহার পরে অন্য আরেকটি সূরা মিলাতে হবে এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাছুরা সব পড়তে হবে। পক্ষান্তরে নামায যদি ৩ বা ৪ রাকআত বিশিষ্ট হয় [যেমন— যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার ওয়াক্তে] তাহলে শুধু প্রথম ২ রাকআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে [৩য় এবং ৪র্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য কোন সূরা মিলানো যাবে না; বরং তখন শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পড়তে হবে] এবং প্রথম বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে উঠে যেতে হবে এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাছুরা সব পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

ফরয নামাযের নিয়ত

‘আমি ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব কিংবা এশার দুই রাকআত কিংবা চার রাকআত ফরয নামায আদায় করছি।’ উল্লেখ্য যে, আরবীতে কিংবা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং যে কোন ভাষায় মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট।

ওয়াজিবের সংজ্ঞা

শরীয়তের যে সকল বিধি-বিধান অকাট্য প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত সেগুলোকে ওয়াজিব বলে। ওয়াজিব কাজ ফরযের মতই আবশ্যকীয়। যেমন— ঈদের নামায, বিতর নামায, সদকায়ে ফিতর, কুরবানী ইত্যাদি।

ওয়াজিবের বিধান

যেমনিভাবে ফরয তরক করলে মানুষ ফাসেক হয়ে যায় এবং শাস্তির উপযুক্ত হয়। তেমনিভাবে ওয়াজিব তরক করলেও ফাসেক হয়ে যায় এবং এর জন্য শাস্তির উপযুক্ত হয়। তবে এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য হলো— কেউ ফরয অস্বীকার করলে সে কাফির হয়ে যাবে, আর ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফির হবে না, তবে ফাসিক হবে। উল্লেখ্য যে, কারো যদি কোন ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে সেটা কাযা করা জরুরি।

ওয়াজিব নামাযসমূহ

যেমন— বিতরের ৩ রাকআত ওয়াজিব নামায, ঈদুল ফিতরের ২ রাকআত ওয়াজিব এবং দুই রাকআত ওয়াজিব নামায।
বিতর নামায পড়ার নিয়ম
বিতর নামাযের প্রত্যেক রাকআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং ৩য় রাকআতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তাকবির বলে [তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় হাত তুলে] দুআয়ে কুনূত পড়তে হবে। আর প্রথম বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে উঠে যেতে হবে এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দুরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাছুরা সব পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। [উল্লেখ্য যে, ঈদের নামায আদায়ের নিয়ম-কানুন ‘সালাতুল ঈদ’ অধ্যায়ে দেখা যেতে পারে]।
ওয়াজিব নামাযের নিয়ত
‘আমি বিতরের তিন রাকআত ওয়াজিব নামায আদায় করছি।’ অথবা আমি ঈদুল ফিতর/আযহার দুই রাকআত ওয়াজিব নামায আদায় করছি। উল্লেখ্য যে, আরবীতে কিংবা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং যে কোন ভাষায় মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট।

সুন্নাতের সংজ্ঞা

যে সকল কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম করেছেন তাকে সুন্নাত বলে। যেমন— সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন—
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَ سُنَّتِىْ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ-
অর্থাৎ, তোমাদের ওপর আমার এবং আদর্শবান খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরণ করা জরুরি।
এই সুন্নাত আবার দুই প্রকার। যথা— [১] সুন্নাতে মুয়াক্কাদা [২] সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা। নিম্নে এ দু’টির সংজ্ঞা দেয়া হলো—
সুন্নাতে মুয়াক্কাদার সংজ্ঞা
সব সময় করেছেন, বিনা ওযরে কোন সময় তরক করেননি, তাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। যেমন— খতনা করা, আযান-ইকামত দেয়া, বিবাহ-শাদী করা ইত্যাদি।

সুন্নাতে মুয়াক্কাদার বিধান

আমলের দিক দিয়ে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ কেউ যদি ওযর ব্যতীত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বর্জন করে অথবা তরক করার অভ্যাস গড়ে নেয়, তাহলে সে ফাসেক ও গুনাহগার হবে এবং এজন্য কিয়ামত দিবসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবে। তবে এই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা তরক করার গুনাহ ওয়াজিব অপেক্ষা কম হবে এবং ওযরবশত কখনো ছুটে গেলে পুনরায় তা কাজা করতে হবে না।

সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাযসমূহ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মোট ১২ রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা রয়েছে। যথা— ফজরে ২ রাকআত সুন্নাত, যোহরে [ফরয নামাযের পূর্বে ৪ রাকআত এবং পরে ২ রাকআত] ৬ রাকআত সুন্নাত, মাগরিবে ২ রাকআত সুন্নাত এবং এশার ২ রাকআত সুন্নাত এই মোট ১২ রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এ ছাড়া তারাবীহ’র নামাযও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। উল্লেখ যে, এছাড়া অন্যান্য যত সুন্নাত আছে সবগুলো সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা তথা নফল বলে গণ্য হবে।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ১২ রাকআত হওয়ার দলীল
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِى الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ دَخَلَ الْجَنَّةَ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ-
অনুবাদ— হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— যে ব্যক্তি দিনে এবং রাতে ১২ রাকআত [সুন্নাত] নামায আদায় করবে, সে সোজা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [আর ১২ রাকআত সুন্নাত হলো নিম্নরূপ]—
[ক] যোহরের নামাযের পূর্বে ৪ রাকআত ও পরে ২ রাকআত।
[খ] মাগরিব ফরয নামাযের পরে ২ রাকআত।
[গ] এশার ফরয নামাযের পর ২ রাকআত।
[ঘ] ফজর নামাযের পূর্বে ২ রাকআত।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামায পড়ার নিয়ম
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাযের প্রত্যেক রাকআতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলাতে হবে, [চাই নামায দুই রাকআত বিশিষ্ট হোক কিংবা চার রাকআত বিশিষ্ট]। আর নামায ৪ রাকআত বিশিষ্ট হলে প্রথম বৈঠকে [দুই রাকআত পড়ে যে বৈঠক করা হয় তাকে প্রথম বৈঠক বলে] শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়তে হবে এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাছুরা সবই পড়তে হবে।

সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদার সংজ্ঞা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ যে সকল আমল ধারাবাহিকভাবে করেননি; বরং ওযর ছাড়াও মাঝে মধ্যে তরক করেছেন, তাকে সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা বা সুন্নাতে যায়েদা বলে।

সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা তথা নফল নামাযসমূহ
ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ব্যতীত অন্যান্য সকল নামাযকেই সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা তথা নফল নামায বলে। যেমন— আসরের পূর্বে চার রাকআত সুন্নাত, সালাতুত তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবীহ, সালাতুল হাজাত, সালাতুল ইস্তিখারা, সালাতুল ইস্তিস্কা, সালাতুল কুছূফ, সালাতুল খুছূফ, সালাতুশ শুকর, সালাতুত তাওবাহ, সালাতুল ফাতাহ, সালাতুল ইশরাক, সালাতুল আউয়াবীন, সালাতুত দোহা [চাশত], তাহিয়্যাতুল অজু, দুখূলুল মসজিদ ইত্যাদি।

এশার নামাজ কয় রাকাত

মাসয়ালা:

ফরজ ছাড়া বাকি সকল নামাজেই প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা সূরার অংশ পড়া আবশ্যক।

সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা তথা নফল নামাযের নিয়ত

আমি দুই/চার রাকআত সালাতুত তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবীহ, সালাতুল হাজাত, সালাতুল ইস্তিখারা ইত্যাদি নামায আদায় করছি। উল্লেখ্য যে, আরবীতে কিংবা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং যে কোন ভাষায় মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট।

সুন্নাত ও নফল নামায ঘরে পড়া উত্তম

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-: إِذَا قَضَى أَحَدُكُمُ الصَّلاَةَ فِى مَسْجِدِهِ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ نَصِيبًا مِنْ صَلاَتِهِ فَإِنَّ اللَّهَ جَاعِلٌ فِى بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ خَيْرًا-
অনুবাদ— হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— তোমাদের কেউ যখন মসজিদের [ফরয] নামায আদায় করে, তখন সে যেন ঘরের জন্য [সুন্নাত ও নফল] নামাযের একটি অংশ নির্দিষ্ট করে নেয়। কেননা তার নামাযের বরকতে আল্লাহ তা‘আলা তার ঘরে বরকত দান করেন।

নফল নামায বসে পড়ার অনুমতি আছে

সালাতুত তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবীহ, সালাতুল হাজাত, সালাতুল ইস্তিখারা, সালাতুশ শুকর, সালাতুত তাওবাহ, সালাতুল ফাতাহ, সালাতুল ইশরাক ইত্যাদি নফল নামায বসে পড়ার অনুমতি আছে। তবে বসে পড়ার দ্বারা সওয়াব অর্ধেক হবে। যেমন, সহীহ মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে—
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ حُدِّثْتُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ: صَلاَةُ الرَّجُلِ قَاعِدًا نِصْفُ الصَّلاَةِ-
অনুবাদ— হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— কেউ বসে নামায পড়লে [দাঁড়িয়ে নামায পড়া থেকে] অর্ধেক সওয়াব হবে।

মৃত ঘর এবং জীবিত ঘরের উদাহরণ

عَنْ أَبِى مُوسٰى عَنِ النَّبِىِّ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ: مَثَلُ الْبَيْتِ الَّذِى يُذْكَرُ اللَّهُ فِيهِ وَالْبَيْتِ الَّذِى لاَ يُذْكَرُ اللهُ فِيهِ مَثَلُ الْحَىِّ وَالْمَيِّتِ-
অনুবাদ— হযরত আবু মূসা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— যে ঘরে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা হয় এবং যে ঘরে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা হয় না, তার উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃতের [ঘরের] ন্যায়।
ফায়েদা: যিকির বলতে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত তাসবীহাত সবই উদ্দেশ্য।