ইহরাম বাঁধার নিয়ম (পুরুষ)

  • ইহরাম বাঁধার প্রায় এক-আধদিন পূর্বেই গোঁফ, চুল, নখ ইত্যাদি পরিস্কার করে সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকা উচিত।
  • ইহরাম বাঁধার সময় ইহরামের নিয়তে গোসল করুন। অসুবিধা থাকলে অযু করলেও চলবে ।
  • সেলাই করা কাপড় খুলে একটি সাদা চাদর লুঙ্গির মত পরে নিন। আর একখানা চাদর গায়ে এমনভাবে জড়িয়ে নিন যেন দুই কাঁধ ও পিঠ ঢেকে যায়।
  • ইহরামের জন্য বিশেষভাবে তৈরি তোয়ালেও ব্যবহার করতে পারেন। দুই ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। যেন পায়ের পাতার উপরে মাঝখানের উঁচু হাড় এবং গোড়ালি খোলা থাকে।
  • ইহরামের কাপড় যেন মোটা এবং ভাল বুননের হয়। যেন শরীর দেখা না যায় ।
  • যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তাহলে ইহরামের নিয়তে টুপি পরে দু’রাকাত নফল নামায আদায় করুন। প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। আর যদি মাকরুহ ওয়াক্ত হয় তাহলে নফল নামায ছাড়াই ইহরাম বাঁধুন । (ফরয নামাযের পর ইহরাম বাঁধলে স্বতন্ত্র নামাযের প্রয়োজন নেই)।
  • নামাযের পর টুপি খুলে রাখুন, তবে কাঁধ ও পিঠ ঢাকা থাকবে ।
  • এখন নিয়ত করুন, আপনি যে ধরনের হজ্বের ইচ্ছা করেছেন সেভাবে নিয়ত করুন।
  • যদি ইফরাদ হজ্বের ইচ্ছা করে থাকেন, তাহলে এভাবে নিয়ত করুন, মনে মনে বলুন- “হে আল্লাহ, আমি হজ্ব পালন করার নিয়ত করছি, আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং কবুল করুন’ । আমীন!
  • যদি ক্বিরান হজ্বের ইচ্ছা করে থাকেন, তাহলে এভাবে নিয়ত করুন- ‘হে আল্লাহ, আমি উমরাহ ও হজ্ব একসাথে পালন করার নিয়ত করছি। আমার জন্য সেদু’টো সহজ করে দিন এবং কবুল করুন’ । আমীন!
  • যদি তামাত্তু’ হজ্বের ইচ্ছা করেন, তাহলে এখন শুধু উমরার নিয়ত করুন এভাবে- ‘হে আল্লাহ, আমি উমরাহ পালন করার নিয়ত করছি, আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং কবুল করুন’ । আমীন!
  • যিনি তামাত্তু’ হজ্বের ইচ্ছা করেছেন তাকে আবার মক্কায় অবস্থানকালে ৮ই যিলহজ্ব হজ্বের নিয়ত করতে হবে।
  • নিয়তের সাথে সাথে তিনবার (কমপক্ষে একবার) তালবিয়া পাঠ করুন একটু উচ্চস্বরে। তারপর দরূদ শরীফ পড়ে দুআ করুন।
  • নিয়তের সাথে সাথে তালবিয়া পড়তে হবে। অর্থাৎ তালবিয়া পাঠের পূর্বে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে, অন্যথায় ইহরাম শুদ্ধ হবে না। আর ইহরাম শুদ্ধ না হলে উমরাহ বা হজ্ব শুদ্ধ হবে না। ইহরামের জন্য নিয়ত ও তালবিয়া উভয়ই অপরিহার্য।
  • এখন ইহরাম বাঁধা হয়ে গেলো। এখন থেকে আপনি ইহরামের বিধিনিষেধের আওতাভূক্ত হলেন। এখন থেকে অধিক পরিমানে তালবিয়া পড়তে থাকুন। আর আপনি এখন থেকে মুহরীম ।
  • ইহরাম বাঁধার আগে বিমান সিডিউল নিশ্চিত হয়ে নিন।

ইহরাম বাঁধার নিয়ম (মহিলা)

  • মহিলাদের জন্য ইহরামের কোন নির্দিষ্ট পোশাক নেই। মহিলারা স্বাভাবিক সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করবেন। যেমন সালোয়ার, কামিজ, ম্যাক্সি, বোরকা ইত্যাদি। যে কোন ধরনের আরামদায়ক জুতাও পরতে পারেন।
  • শুধু শাড়ীতে যেহেতু পর্দা করা অসুবিধাজনক এজন্য সালোয়ার, কামিজ, ম্যাক্সি ইত্যাদি পরা সুবিধাজনক।
    ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করে নিন। গোসল করতে অসুবিধা হলে অযু করে নিন। চিরুণি দিয়ে খুব ভালোভাবে চুল আঁচড়িয়ে নিন ।
  • এই গোসল শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য, একারণে ঋতুবর্তী মহিলা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জন্যও তা সুন্নাত, এর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা শরীয়াতসম্মত নয় ।
  • যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তাহলে ইহরামের নিয়তে দু’রাকাত নফল নামায পড়ে নিন । আর মাকরুহ ওয়াক্ত হলে নফল নামায ছাড়াই ইহরাম বেঁধে নিন ।
  • এবার নিয়ত করুন, আপনি যে ধরনের হজ্বের ইচ্ছা করেছেন সেভাবে নিয়ত করুন। পুরুষ ও মহিলার জন্য হজ্বের নিয়ত একই রকম।
  • নিয়তের সাথে সাথে তিনবার তালবিয়া পড়ুন নিম্নস্বরে। যদি কোন মহিলা পড়তে না পারেন তাহলে তার মাহরাম বা অন্য কোন মহিলা তাকে পড়িয়ে দিন। তারপর দরূদ শরীফ পড়ুন এবং দুআ করুন।
  • এখন ইহরাম বাঁধা হয়ে গেলো। এখন থেকে আপনি ইহরামের বিধিনিষেধের আওতাভূক্ত হলেন । আর আপনি হলেন মুহরীমা।

মহিলাদের জন্য হজ্ব-উমরার প্রাসঙ্গিক কিছু মাসআলা

* মহিলারা ইহরাম বাঁধার পর মুখমন্ডল খোলা রাখবেন। তবে বেগানা পরুষের সামনে ওড়না দাড়া মুখ ঢেকে নিবেন এমনভাবে যেন কাপড় চেহারা স্পর্শ না করে।
* ইহরামের জন্য অযু করলে মাথার রুমাল সরিয়ে চুলের উপরই মাথা মাসেহ করতে হবে।
* ইহরাম অবস্থায় অলংকার এবং হাতমোজা পরা জায়েয তবে না পরাই উত্তম ।
* মহিলারা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বেন না, নিজে কানে শুনতে পান এমনভাবে পড়বেন।
* মহিলাদের জন্য মাথা মুন্ডন করা নিষিদ্ধ । সুতরাং ইহরাম খোলার পর সমস্ত চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের এক কড়া পরিমাণ চুল নিজের হাতে বা অন্য মহিলা দ্বারা অথবা মাহরাম ব্যক্তি দ্বারা কেটে ফেলতে হবে। কোন বেগানা পুরুষকে দিয়ে কাটানো বৈধ নয় ।
* মহিলারা তাওয়াফের সময় কখনও ‘ইজতিবা’ ও ‘রমল’ করবেন না এবং সায়ী করার সময় সবুজ বাতিদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়াবেন না বরং স্বাভাবিক গতিতে চলবেন।
* যথাসম্ভব পরুষদের এড়িয়ে হজ্ব ও উমরার আমল সম্পন্ন করুন।
* ইহরাম বাঁধার সময় কোন মহিলা ঋতুবর্তী অবস্থায় থাকলে নামায পড়া ছাড়া বাকী কাজগুলো করে ইহরাম বাঁধুন।
* ঋতুবর্তী অবস্থায় মসজিদে হারামে প্রবেশ করবেন না। ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর উমরার বাকী কাজগুলো অর্থাৎ তাওয়াফ, সায়ী ইত্যাদি করবেন।
* হজ্বের শুরুতে অর্থাৎ, ৮ই যিলহজ মিনা যাওয়ার সময় যদি কোন মহিলা ঋতুবর্তী থাকেন, তাহলে নামায ছাড়া অন্য কাজগুলো করে ইহরাম বেঁধে নিন এবং তাওয়াফে যিয়ারত ছাড়া হজ্বের অন্যান্য কাজগুলো সম্পন্ন করুন।
* এরপর অপেক্ষা করুন। ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফে যিয়ারত করুন। এই বিলম্বের জন্য (১২ই যিলহজ্বের পরে হলেও) তার উপর কোন দম অর্থাৎ কাফফারা স্বরূপ কুরবানী ওয়াজিব হবে না। তবে মনে রাখবেন তাওয়াফে যিয়ারত ছাড়া হজ্ব আদায় হয় না ।
* বিদায়ী তাওয়াফের সময় যদি কোন মহিলা ঋতুবর্তী হন এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করা তার জন্য সম্ভব না হয় তাহলে তাওয়াফে বিদা তার উপর ওয়াজিব থাকবে না। তার উচিত মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে দরজার নিকট দাড়িয়ে দুআ করে রওয়ানা হয়ে যাওয়া ।
* কোন কোন মহিলা হজ্বের সময় ঋতুনিরোধ পিল খেয়ে থাকেন, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হলে শরীয়াতে নিষেধ নেই ।
* ইহরাম বাঁধার পরও মহিলারা মাথা ঢেকে রাখবেন।
* খেয়াল রাখবেন নামাযে হাত উঠানোর সময় যেন হাত ওড়নার ভেতরে থাকে ।
* মহিলারা নামায পড়া অবস্থায় মুখমন্ডল, হাত এবং পা ব্যতীত শরীরের অন্য কোন অঙ্গের এক-চতুর্থাংশ পরিমান যদি এতক্ষণ খোলা থাকে যে তিনবার সুবহানাল্লাহ পড়া যায়, তাহলে নামায সহীহ হবে না। এর চেয়ে কম সময় খোলা থাকলে নামায সহীহ হবে, কিন্তু গুনাহ হবে।
* মহিলারা এমন সময় তাওয়াফ শুরু করবেন যেন নামাযের জামাতের আগেই তাওয়াফ শেষ হয়ে যায়।
* মহিলারা পুরুষের সাথে নামাযে দাড়াবেন না। তারা বাবুননিসা বা মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে নামায পড়বেন।