উমরার দ্বিতীয় কাজ তাওয়াফ করা।
তাওয়াফ শব্দের অর্থ কোন কিছুর চতুর্দিকে ঘোরা। শরীয়াতের পরিভাষায় কা’বা শরীফের চতুর্দিকে পাক পবিত্র অবস্থায় শরীয়াত নির্দেশিত নিয়মে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়। প্রথমে অযু করে পাক সাফ হয়ে মসজিদে হারামে এসে নিয়ত করতে হবে । (মনে মনে বলুন) ‘হে আল্লাহ, আমি তাওয়াফের ইচ্ছা করছি তুমি তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল কর’। বাইতুল্লাহর যে কোণায় হাজরে আসওয়াদ রয়েছে সে কোণায় হাজরে আসওয়াদকে বাম পাশে রেখে দাঁড়াতে হবে। একটু সামনে অগ্রসর হয়ে এবং হাজরে আসওয়াদকে সামনে রেখে তাওয়াফের নিয়ত করে নামাযের তাকবীরে তাহরীমার মত হাত উঠিয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ বলতে হবে।
অতপর হাত নামিয়ে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদের উপর হাত দু’টো এমনভাবে রাখতে হবে যেমনভাবে সিজদায় রাখা হয়। এরপর আদবের সাথে উক্ত পাথরে চুম্বন করতে হবে। সম্ভব না হলে উক্ত পাথরের দিকে হাত বা অন্য কিছু দিয়ে ইশারা করে তাতে চুম্বন করতে হবে। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে তাড়াহুড়ো করা যাবে না এবং কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না। অতপরঃ ডান দিকে কা’বা শরীফের দরজার দিকে অগ্রসর হতে হবে। তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানী (কা’বা শরীফের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ) পৌঁছে তা শুধু ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করতে হবে, সম্ভব না হলে প্রয়োজন নেই। পুনরায় হাজরে আসওয়াদের দিকে চক্কর ঘুরে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ বলে তাতে চুম্বন করতে হবে। সম্ভব না হলে হাত বা অন্য কিছু দ্বারা ইশারা করে তাতে চুম্বন করতে হবে। এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করতে হবে। তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’রাকাত ওয়াজিবুত তাওয়াফ নামায আদায় করতে হবে। (মাকামে ইবরাহীম হলো একটি পাথর যার উপর দাড়িয়ে হযরত ইবরাহীম আ. কা’বা শরীফ নির্মাণ করেছিলেন। এটা কা’বা শরীফের দরজার সামনের দিকে গ্লাস ও পিতলের ছোট একটি গম্বুজের মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে)।
হারাম শরীফের চত্তরে এসে নিজ নিজ জুতা/স্যান্ডেল কাপড়ের ব্যাগে ভরে ফেলুন। * তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিন।
বাবুস সালাম নামক দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করুন। সম্ভব না হলে অন্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করুন।
মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় প্রথমে ডান পা রাখুন এবং এই দুআ পড়ুন-
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফির লী যাবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রহমাতিক। (শুধু মসজিদে হারামেই নয়, যে কোন মসজিদে প্রবেশের সময় এই দুআ পড়তে হয়)
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
* কা’বা শরীফকে দেখে সর্বপ্রথম যে দুআ করা হয় আল্লাহ পাক তা কবুল করে নেন। তাই এই সময় অন্তরের অন্তস্থল থেকে দুআ করুন।
* এই দুআও করুন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা রিযাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিন সাখতিকা ওয়ান্নার ।
* পুরুষরা ইজতিবা করে নিন। পুরো তাওয়াফ তথা সাত চক্করেই ইজতিবা করতে হবে।
* এবার মাতাফে এসে কা’বা শরীফের যে কোণে হাজরে আসওয়াদ রয়েছে সে কোণে এসে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে দাঁড়ান ।
* মনে মনে তাওয়াফের নিয়ত করুন এভাবে- ‘হে আল্লাহ, আমি তাওয়াফের ইচ্ছা করছি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং কবুল করুন’ ।
* এরপর নামাযের তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে এই দুআ পড়ুন-
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ
এরপর দুহাত নামিয়ে ফেলুন।
* এরপর ইসতিলাম করুন, অর্থাৎ যথারীতি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করুন। সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে উভয় হাতের তালু দিয়ে ইশারা করে দুই হাতের তালুতেই চুম্বন করুন।
* নিজ স্থান থেকে ডান দিকে ফিরে তাওয়াফের জন্য সামনের দিকে চলতে থাকুন।
* সব সময় খেয়াল রাখবেন ইসতিলাম করার সময় ছাড়া পুরো তাওয়াফের সময় কা’বা শরীফ যেন আপনার বামে থাকে।
* শুধু পুরুষরা প্রথম তিন চক্করে রমল করুন।
* একটু সামনে অগ্রসর হয়ে হাতীমে কা’বা, হাতীমকে বেড় দিয়ে তাওয়াফ করুন।
* হাতীম পার হয়ে কা’বার পশ্চিম-দক্ষিণ কোণের নাম রুকনে ইয়ামানী। এখানে পৌঁছে রুকনে ইয়ামানী ডান হাতে স্পর্শ করুন।
* রুকনে ইয়ামানীকে চুম্বন করবেন না এবং স্পর্শ করতে না পারলে ইশারাও করবেন না।
* রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদ-এর মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছে এই দুআ পড়ুন-
উচ্চারণঃ রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া, হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবাননার ।
* উপরোল্লিখিত দুআ পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে এক চক্কর পূর্ণ করুন । * এই দুআটি ছাড়া তাওয়াফকালে পড়ার জন্য অন্য কোন দুআ হাদীসে বর্ণিত নেই । অতএব অন্য কোন দুআ না পড়ে খুব মনোযোগ ও ধ্যানের সাথে তাওয়াফ করুন।
* তাওয়াফকালে দৃষ্টি সংযত রাখুন এবং খুব শান্তশিষ্টভাবে তাওয়াফ করুন।
* হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে আবার ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ বলে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করুন। সম্ভব না হলে হাত দ্বারা ইশারা করে হাতের তালুতে চুম্বন করুন।
* এরপর দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন এবং প্রথম চক্করের মত আমল করুন। এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করুন।
* সপ্তম চক্কর শেষে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন বা ইশারা করে হাতের তালুতে চুম্বন করুন। তবে প্রথমবার ছাড়া তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় হাত উঠাবেন না।
* এবার চাদরের ইজতিবা খুলে ডান কাঁধ ঢেকে নিন।
* তাওয়াফ শেষে সম্ভব হলে মুলতাযামে আসুন এবং মুলতাযাম ধরে দুআ করুন। এটা দুআ কবুলের বিশেষ স্থান। তবে সম্ভব না হলে এ কাজটা পরে সুযোগ সুবিধামত করে নিন।
*হাজরে আসওয়াদ ও কা’বা শরীফের দরজার মধ্যবর্তী স্থানকে মুলতাযাম বলে।
*তাওয়াফ শেষে ইজতিবা খুলে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’রাকাত নামায পড়ন। সম্ভব না হলে অন্য কোন স্থানে গিয়ে পড়ুন। এই দু’রাকাত নামাযে সূরা ফাতিহার পরে প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং ২য় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম ।
* নামায শেষে দুআ করুন। এটা দুআ কবুলের সময়।
* মাকরুহ ওয়াক্ত হলে মাকরুহ ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর এই নামায পড়ুন ।
* অনেকে ঝামেলা ভেবে বিনা অযুতে এই নামায আদায় করে নেয় এটা মস্তবড় গুনাহ ।
* নামায অদায়ের পর সাফা পাহাড়ের দিকে যেতে বামপাশে রাখা পাত্র থেকে যমযমের পানি তৃপ্তি সহকারে পান করুন এবং কিছুটা পানি মুখ মন্ডল ও বুকে ছিটিয়ে দিন।