কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও সহজে কুরআন শেখার উপায়

কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও সহজে কুরআন শেখার উপায়

বাংলাদেশ একটি ইসলাম ধর্ম-প্রধান দেশ। এখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। প্রায় ১৫ কোটি মুসলমানের এই দেশে প্রধান ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে আল কুরআন যা পাঠ করা মুসলিমদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষই এই আল কুরআন পাঠ করতে জানেনা। এর মূল কারন ধরা হয় আরবি অর্থাৎ কুরআন এর ভাষার ব্যবহারিকতার অভাব। চাকরি বাকরি সহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে এই ভাষার কোনো ব্যবহারই নেই। যার কারনে মানুষ এই ভাষা শিক্ষা অর্থাৎ কুরআন পাঠ করার প্রতি তেমন আগ্রহী না। কিন্তু এই ভাষার ব্যবহারিকতা ইহকালে না থাকলেও পরকালে এর গুরুত্ব যে অপরিসীম সে বিষয়টা মানুষ ভুলেই গেছে।

আবার অনেকে আছেন যারা শিখতে চান কিন্তু পর্যাপ্ত রিসোর্স এর অভাবে শিখতে পারছেন না।  এই দুই ধরনের মানুষের জন্যই মুলত এই আর্টিকেলটি লেখা। এটি পড়ার পর কুরআন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ একটু হলেও বৃদ্ধি পাবে এবং সাথে সাথে আপনি এখান থেকে খুব সহজে কুরআন শেখার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় কুরান শিক্ষার গুরুত্ব ও সহজে কুরআন শেখার উপায়। তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক আমাদের আলোচনা।

কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব

প্রথমে চলুন কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব দিয়ে শুরু করা যাক। আল-কুরআন কে ইসলাম ধর্মের ধর্মগন্থ বলা হয়। অর্থাৎ এই গ্রন্থটির গুরুত্ব ইসলামে সবথেকে বেশি । এটিকে পুস্তকের থেকে বেশি মুসলিম দের পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা বলা হয়। চলুন বিস্তারিততে যাওয়া যাকঃ

কুরআন শিক্ষা ফরয

ইসলামে কুরআন শিক্ষা সকলের জন্য ফরজ করা হয়েছে। নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবি করতে হলে প্রথমেই আপনাকে এই দক্ষতাটি অর্জন করা বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ তায়ালা সুরা আলাকের এক নং আয়াতে খুব সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন যে, “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন”

পাশাপাশি আমাদের নবি মুহাম্মদ (সঃ)-ও  নিয়মিত অনেক সময় নিয়ে কুরআন তেলওয়াত করতেন এবং সাহাবি দেরকে সবসময় কুরআন তেলওয়াতে অনুপ্রানিত করতেন। অতএব আমাদের এই এবাদতটি বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগই নাই।

সালাত আদায়ের জন্য কুরআন শিক্ষা

সালাত আদায় করা মুসলিমদের জন্য ফরজ করা হয়েছে । হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম এই সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। সালাত ব্যতীত কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। নামাজকে বেহেস্তের চাবি বলা হয়ে থাকে। আর এই ইবাদতটি পালন করার জন্য কুরআন শিক্ষা অপরিহার্য।

কুরআন এর আয়াত বা সুরা পাঠ ব্যতীত নামাজ আদায় সম্ভব নয়। সহীহ বুখারী হাদিসে বলা হয়েছে যে, সুরা ফাতিহা ব্যতিত নামাজই হয় না।  তাই সালাত আদায়ের জন্য হলেও আপনাদের কুরআন শিক্ষা দরকার।

জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা

প্রত্যেক মুসলমানেরই সর্বোচ্চ কামনা হচ্ছে জান্নাত। আর একটি সহিহ হাদিসে এসেছে যে, কুরআন ও সিয়াম মানুষ জান্নাত নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে হাশরের ময়দানে। তাই, হাদিসে এসেছে যে,  কিয়ামতের দিন সিয়াম আল্লাহর কাছে বলবে যে, আমি দিনের বেলায় তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত  রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর।

অন্য দিকে কুরআন বলবে, হে আল্লাহ তায়ালা, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। আমার সুপারিশ তুমি কবুল করো। তারপর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উভয়ের সুপারিশই আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নিবেন।  এই হাদিস টা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে নিয়মিত কুরআন তেলওয়াত জান্নাত নসিবের ক্ষেত্রে কি পরিমান সহায়তা করবে আপনাকে। তাই, এই দিকটা বিচার করে হলেও সকলেরই উচিৎ নিয়মিত কুরআন তেলওয়াত করা উচিৎ।

কুরআন প্রচারের জন্য শিক্ষা করা

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা কুরআন প্রচারের জন্য আহবান করেছেন । সুরা মায়দাহ-র ৬৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন হে রাসুল, তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।  এরই পরিপেক্ষিতে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যতদুর সম্ভব প্রচার করেছেন এবং তার সাহাবীদেরকে কুরআন প্রচারের জন্য নিয়োজিত করেছিলেন।

অতএব এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, কুরআন প্রচার প্রচারনা একজন মুসলিম হিসাবে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। এখন আপনি যদি কুরআন পাঠই না  করতে পারেন, সেক্ষেত্রে কিভাবে প্রচার করবেন?

হেদায়াত লাভের জন্য কুরআন শিক্ষা

কুরআন একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আপনার যেকোনো সমস্যার সমাধান আপনি কুরআন এ পেয়ে যাবেন এবং এই কুরআন অনুযায়ী যদি আপনার জীবন পরিচালনা করেন, তাহলে কোনো বাধা বিপত্তি সামনে আসবেনা এবং আপনি হবেন ইহকাল এবং পরকাল উভয় জীবনেই সুখি। তাই যদি সঠিক পথে জীবন পরিচালনা করতে চান, তাহলে অবশ্যই কুরআন অনুযায়ী তা করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে কুরআন শিখতে হবে।

আসলে কুরআন পাঠের অগণিত ফজিলত রয়েছে। বলতে গেলে পৃথিবীর জীবনের সকল সমস্যার সমাধান এই কুরআন। তাই, আমাদের সকলেরই উচিত কুরআন শিখে নিয়মিত তা চর্চা করা এবং সেই অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করা।

সহজে কুরআন শেখার উপায়

কুরআন শিক্ষার অনেক বই আপনি কিনতে পেয়ে যাবেন লাইব্রেরীতে। পাশাপাশি এখন ইন্টারনেটেও অনেক রিসোর্স পেয়ে যাবেন। সেগুলো পাঠ করে খুব সহজেই আপনি কুরআন শিখতে পারবেন। অথবা আপনি কুরআন শিক্ষার কোর্সও করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে খুব সহজেই দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে দ্রুত কুরআন মাজিদ শিখতে পারবেন। কিন্তু মানুষ আসলে শুরু করতেই ভয় পায়। এখানে আমরা কুরআন শিক্ষার এমন কিছু উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, যে পুরো বিষয় টা খুব সহজ হয়ে যাবে আপনার কাছে। চলুন শুরু করা যাকঃ

মন শুদ্ধ করুন এবং শেখার পরিবেশ সৃষ্টি করুন

কুরআন সবথেকে পবিত্র একটি গ্রন্থ। তাই এটি পাঠ করার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে হবে প্রথমেই। মন থেকে সকল অশুদ্ধতা দুর করে ফজরের নামাজের পর পরই কুরআন শিখার চেষ্টা করতে হবে। এসময়টিই আসলে সঠিক সময় কুরআন পাঠের। এসময় মানুষের প্রোডাক্টিভিটি সব থেকে বেশি থাকে এবং সব কিছু সহঝেই মানুষ বুঝতে ও শিখতে পারেন। পাঠের সময় অবশ্যই একটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও পাক পবিত্র জায়গায় বসবেন। এই জিনিসগুলো নিশ্চিত করে কুরআন শিক্ষা শুরু করবেন।

প্রথমে প্রাথমিক বিষয় গুলো জানুন

কুরআন শিক্ষার প্রথম ধাপে আপনাকে এর মৌলিক বিষয়গুলো আপনাকে খুব ভালোভাবে  এবং গুরুত্ব সহকারে শিখতে হবে। যেমন, কুরানের ধ্বনিবিদ্যা, এর হরফ বা অক্ষরগুলো, হরফ বা অক্ষরের ধরনগুলো, হরকতগুলো, মাখরাজ, মৌলিক চিহ্ন এবং সবকিছুর উচ্চারন।

এই প্রাথমিক জিনিসগুলো এবং এদের ব্যবহার খুব গুরুত্বসহকারে শিখতে হবে। চেষ্টা করবেন নোট করে রাখার মৌলিক বিষয়গুলো যাতে পরবর্তীতে ভুলে গেলেও খুজে পেতে বেগ পেতে না হয়। মুলত এগুলো শেখা হয়ে গেলেই আপনার কুরআন অর্ধেকের ও বেশি শেখা হয়ে যাবে।

পাঠ করতে শুরু করুন

হরফ, হরকত, ও বিভিন্ন চিহ্ন গুলোর উচ্চারন ও সঠিক ব্যবহার যখন শিখে যাবেন, তখনই আস্তে আস্তে কুরআন পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এই ধাপেই সব অক্ষর ও হরকতের উচ্চারন, টান এগুলো শিখে ফেলবেন। পাশাপাশি কুরআন তেলওয়াত এর ও বিভিন্ন নিয়ন শিখে ফেলবেন। তাজবীদ শিখবেন এ ধাপেই। তাজবীদ হচ্ছে সহিহ ও শুদ্ধ করে কুরআন পড়ার নিয়ম। এটিকে ফরজ করা হয়েছে কুরআন পাঠের ক্ষেত্রে। তাই খুবই গুরুত্ব সহকারে এটি শিখবেন।

তেলওয়াত এর চেষ্টা করুন

সব নিয়ম শিখে শুরুতে ধিরে ধিরে তেলওয়াত এর চেষ্টা করবেন। চেষ্টা করবেন যতদুর সম্ভব মধুর করার জন্য তেলওয়াত। আয়াতের অর্থও পড়বেন সাথে সাথে। তাহলে পাঠ করতে বেশি ভালো লাগবে। এভাবে পড়তে পড়তে আপনি একসময় দ্রুত ও শুদ্ধ ভাবে পরতে পারবেন।

 

মুখস্থ করার শুরু করুন

এক পর্যায়ে আপনি যখন কুরআন তেলওয়াত খুব দ্রুত ও সাবলিল ভাষায় করতে পারবেন, তখন চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব মুখস্থ করার। কারন এই পবিত্র গ্রন্থ যত অন্তঃস্থ করতে পারবেন ততই লাভ।

ইতি কথা

এই ছিল মুলত আমাদের কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও সহজে কুরআন শেখার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। এখানে একটা কথা না বললেই নয়, তা হলো কুরআন শিখে শুধু নিয়মিত পাঠ করলেই হবে না, সেই অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালিত করতে হবে।

আমরা বাস্তব জীবনে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারির ক্ষেত্রে যা পড়ছি বইয়ে, পরবর্তীতে চাকরি জীবনে কিন্তু সেই জ্ঞান অনুযায়ীই কাজ করছি। আল-কুরআন এর ক্ষেত্রেই একই ভাবে সেই কাজ টিই করতে হবে। তখনই পাওয়া যাবে এর মূল ফজিলত, একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন। ইহকালেও, পরকালেও।

 

 

 

 

 

Comment List

  • admin
    January 31, 2022

    Nice work!

  • admin
    February 1, 2022

    MashAllah..!

  • admin
    August 24, 2022

    আলহামদুলিল্লাহ্‌ খুবই উপকারি এবং সহজেই যে কেউ কুরআন শিখতে পারবেন। আল্লাহ তা’য়ালা শায়েখের এই মহৎ উদ্দেশ্য কবুল করে নিন এবং তাকে এর উত্তম প্রতিদান দান করুক, আমিন।

Write a comment